হাট প্রস্তুত, গরু আসছে অপেক্ষা ক্রেতার - Amader Bangladesh

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে জমে উঠতে শুরু করেছে রাজধানীর স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটগুলো। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ট্রাকভর্তি গরু আসছে হাটগুলোতে। আনার পথে কোথাও কোথাও চাঁদা তোলার অভিযোগ তুলছেন গরু ব্যবসায়ীরা। হাটগুলোতে গরু নিয়ে আসছেন খামারিরাও। তারা হাটগুলোতে নিজ হাতে গরুগুলোর পরিচর্যা করছেন, খাওয়াচ্ছেন। মমতা দিয়ে নিজের পালা গরু বিক্রি করতে হবে ভেবে অনেকে মন খারাপের কথাও জানালেন। তবে নানা ঝক্কিঝামেলা পার হয়ে ঢাকায় আসার পর ভালো দামের আশায় এখন প্রহর গুনছেন তারা। ব্যবসায়ী ও খামারিরা মনে করছেন, এবার যেহেতু নির্বাচনের বছর, তাই গরু কেনা হবে বেশি।

এদিকে গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি এবং পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় গরুর দাম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়বে বলে জানান খামারি ও ব্যাপারীরা। তারা মনে করেন, গত বছর সিরাজগঞ্জ থেকে যে ট্রাক ১০ হাজার টাকায় ঢাকায় আসত, এবার সেই ট্রাক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ভাড়া নিচ্ছে। এর মধ্যে সব ধরনের গোখাদ্যের দাম বেড়েছে। গ্রামীণ হাট, প্রান্তিক খামারি ও গৃহস্থের বাড়ি থেকে বাড়তি দামে গরু সংগ্রহ করে ঢাকায় আনা হচ্ছে। এরপর ঢাকায় তিন-চার দিন বসে থেকে যে খরচ হচ্ছে, তাতে বাড়তি দামে গরু বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

advertisement

সিরাজগঞ্জ থেকে ১৬টি গরু নিয়ে রাজধানীর তেজগাঁও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠের অস্থায়ী হাটে ক্রেতার অপেক্ষায় ব্যাপারী মনির হোসেন। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে এই হাটে ১৬টি গরু নামাইছি। এখনো একটাও বিক্রি হয় নাই। গরু বিক্রি করব রবিবার, সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত। এখন রাস্তায় যানজট কম, তাই নিয়ে আসছি। যদি দুই একটা কাস্টমার পাই, দামে মিললে ছেড়ে দেব। রবিবার আমাদের সিরাজগঞ্জের হাট, সেখান থেকে গরু কিনে ওই দিন রাতেই মূলত ঢাকায় গরু ঢুকবে বেশি।’

মনির হোসেন আরও বলেন, রবিবার দেশের বিভিন্ন জেলায় পশুর হাট বসে। যারা ব্যাপারী, তারা মূলত জেলার হাটগুলো থেকে পশু ক্রয় করে ঢাকা চট্টগ্রামের হাটে তোলেন। এবারও অনেকে গরু নিয়ে অপেক্ষা করছেন সোমবারের। আগামী সোমবার ২৬ জুন থেকে বেচাকেনার পরিমাণ বেড়ে যাবে।

বাড়তি দামের বিষয়ে ব্যাপারী মনির হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘গরুর খাদ্যের দাম বেশি। আনার খরচ বেশি। দাম তো একটু বাড়বেই। আমরা কিনেছি বেশি দামে, লোকসান দিয়ে তো আর বিক্রি করা যাবে না। এবার প্রত্যেকটা গরুর দাম বাড়বে।’

সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় আনার পথে দুই জায়গায় চাঁদা আদায়ের চেষ্টা হয়েছিল জানিয়ে ব্যাপারী মনির বলেন, গাড়ির সামনে লাঠি নিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে। আমি ড্রাইভারকে বলেছি গাড়ি টান মারতে। চলে আসছি। টাকা দিতে হয়নি।’

এদিকে পুরান ঢাকার ধোলাইখাল, পোস্তগোলা এবং দনিয়া হাট ঘুরেও দেখা গেছে কিছু গরু নিয়ে অপেক্ষা করছেন ব্যাপারী ও খামারিরা। তবে এবার হাট বসেনি ঐতিহ্যবাহী নয়াবাজারে। খামারিদের দাবি, অবৈধ পথে দেশে গরু না ঢুকলে লাভে থাকবেন তারা।

গতকাল পুরান ঢাকার ধোলাইখাল ট্রাকস্ট্যান্ড, ধুপখোলা মাঠ এবং পোস্তগোলার পশুরহাট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে হাটে প্রচার চলছে পুরোদমে। নানা রঙে সাজানো হয়েছে ব্যানার ও গেট। পশু বেঁধে রাখতে বাঁশের খুঁটি মাটিতে পোঁতার কাজও শেষ। পশু ব্যবসায়ীদের বিশ্রামের জন্য আলাদা জায়গাও প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা খামারিরা ব্যস্ত গরুর জায়গা নির্ধারণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রস্তুতিতে। এ সময় দেখা যায়, এক খামারি নিজের হাতে গরুকে খাইয়ে দিচ্ছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই গরুটা আমার হাতে ছাড়া খায় না। এত দিন ধরে পালছি, এখন পেটের দায়ে বিক্রি করে দিতে হবে।’

কুষ্টিয়া থেকে আসা খামারি তুহিন আমাদের সময়কে বলেন, ‘৩২টি গরু নিয়ে আজ সকালে ঢাকা এসেছি। ক্রেতা টুকটাক আসছে, তবে আজকে গরু রাখার জায়গা ঠিকঠাক করতেই বেশি সময় চলে যাচ্ছে। এ জন্য ক্রেতাদের সঙ্গে সেভাবে কথা বলতে পারছি না।’ এ সময় তার থেকে জানা যায়, এক লাখ বিশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকাতে পারেন তিনি।

এসব হাটে বেশির ভাগ গরুই এসেছে কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা থেকে। নেপালি, শাহীওয়াল, দেশি গরুই বেশি। এ ছাড়া রয়েছে ফ্রিজিয়ান, রেড চিটাগাং ক্যাটেলসহ নানা জাতের গরু। তবে চাহিদা থাকলেও দেখা মেলেনি ঐতিহ্যবাহী মীরকাদিমের ধবল গাইয়ের। চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা খামারি পিন্টু বিশ্বাস বলেন, ‘এই হাটে পঞ্চমবারের মতো আসলাম। গতবার লাভ হয়েছিল, এবারও ইনশাল্লাহ আশাবাদী।’ তিনি জানান, তিন মণ ওজনের শাহীওয়াল গরুর দাম পড়বে দেড় লাখ টাকার মতো। তবে অবৈধভাবে ঢোকা গরু হাটে এলে তাদের ক্ষতি হবে।

অন্যদিকে, ক্রেতারা গরুর বাড়তি দামে অস্বস্তিতে আছেন। পুরান ঢাকার বাসিন্দা ক্রেতা সুমন বলেন, ‘প্রথম দিন গরু দেখতে চলে এসেছি। তবে এবারে গরুর দাম অনেকটাই বেশি। শেষ পর্যন্ত দেখা যাক, দাম কমে কিনা!’ আরেক ক্রেতা বলেন, ‘প্রতিবছর খামার থেকেই গরু কিনে থাকি। খামার থেকে গরু কিনলে সুবিধা রয়েছে। ঈদ পর্যন্ত গরু খামারে রাখা যায়। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয় না। তবে হাটে এসেছি ঐতিহ্যের কারণে।’

গরুর দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে এক খামারি জানান, একটি মাঝারি সাইজের গরুর পেছনে দিনে পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা খরচ হয়। একটি গরু এক দেড় বছর পালা থেকে। সেটি হাটে আনা পর্যন্ত যে পরিমাণ খরচ হয়, তাতে লাভ হয় খুবই সামান্য। আর এখন গরুর খাবারের দামও বেশি। তাই সবকিছু মিলিয়ে গরুর দামও বেশি চাইতে হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে পোস্তগোলা শ্মশানঘাট পশুর হাটের ইজারাদার শাহনুর গাজী আমাদের সময়কে বলেন, পশুর হাটের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খামারিরা ভালো জায়গার জন্য আগেভাগেই চলে এসেছেন। আগামী রবিবার ও সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিক বিক্রি শুরু হবে। ক্রেতা ও বিক্রেতার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং বুথ, জাল টাকা শনাক্তের বুথসহ নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অন্যদিকে গাবতলীতে স্থায়ী পশুর হাটে পাবনা থেকে ৪০টি গরু নিয়ে উঠেছেন ব্যাপারী হাচেন। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘গতবারের চাইতে এবার বাজার মন্দা। যে হারে গরুর খাদ্যের দাম বাড়ছে, সেই তুলনায় দাম বাড়েনি। আমি ৪০টি গরু নিয়ে আজ রাতেই নামছি। আরও গরু আসবে। হাটে বেচাকেনা শুরু হবে রবিবার থেকে। এখন জায়গা ধরে রাখার জন্য সবাই অল্প অল্প গরু নিয়ে ঢাকায় আসছে। আগামী সোমবার ২৬ জুন থেকে পুরোপুরি জমে উঠবে হাটগুলো।’

এদিকে গাবতলীর মূল হাটের স্থান সম্প্রসারিত হয়েছে। যেসব ক্রেতার বাড়িতে গরু রাখার মতো বাড়তি জায়গা আছে, তারা এখনই গরু কিনছেন গরু। তবে চূড়ান্তভাবে বেচাকেনা হবে মঙ্গল ও বুধবার।

উল্লেখ্য এ বছর রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ১৯টি স্থানে বসছে পশুর হাট। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) রয়েছে ১০টি এবং দক্ষিণে (ডিএসসিসি) ৯টি।

About Author