মাংস খাইয়ে খুনের পর লাশ গুম করে দুই বন্ধু - Amader Bangladesh

আহমদুল হাসান আসিক : কয়েক মাস আগে কারাগারে পরিচয় হয় দুই ইয়াবা ব্যবসায়ী সুমন মিয়া ও শাহীন শেখের। তিন মাস আগে তারা জামিনে মুক্তি পান। ছাড়া পাওয়ার পর তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ে। ফলে এবার দুজন মিলেই ফের জড়িয়ে পড়েন ইয়াবা ব্যবসায়; কিন্তু এই ব্যবসার লেনদেন নিয়েই একসময় তাদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। ইয়াবা বিক্রির ১৪ হাজার টাকা শাহীনকে পরিশোধ করছিল না সুমন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করে শাহীন।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাঁসের মাংস খাওয়ানোর কথা বলে গত ১১ মে রাতে সুমনকে ডেকে নেন শাহীন। রাতে এক সঙ্গে সুমন, শাহীন এবং তার বন্ধু আসলাম শেখ হাঁসের মাংস খেয়ে আড্ডা দিতে যান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের নয়াগাঁও এলাকার একটি ঝিলপাড়ে। সেখানেই আড্ডার মধ্যে শাহীন পেছন থেকে হাতুড়ি দিয়ে সুমনের মাথায় আঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় সুমন পালানোর চেষ্টা করলে শাহীন ও আসলাম তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ঝিলে কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রেখে পালিয়ে যায়।

রাজধানীর পল্টন থানার একটি নিখোঁজ জিডির তদন্ত করতে গিয়ে গত মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর গেন্ডারিয়া থেকে পুলিশ শাহীন ও আসলামকে গ্রেপ্তার করলে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য উঠে আসে। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই ওইদিন মধ্যরাতে নয়াগাঁওয়ের সেই ঝিল থেকে উদ্ধার করা হয় সুমনের অর্ধগলিত লাশ।

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) জাহিদুল ইসলাম বলেন, নিখোঁজের কয়েকদিন পর ২৫ মে পল্টন থানায় জিডি করে সুমনের পরিবার। ওই জিডির তদন্ত শুরুর পর প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সন্দেহভাজন হিসেবে সুমনের বন্ধু শাহীন এবং আসলামকে শনাক্ত করা হয়। দুই সপ্তাহের চেষ্টায় দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা স্বীকার করে, সুমনকে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়েছে। পরে তাদের সঙ্গে নিয়েই সুমনের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সুমন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার আব্দুর রবের ছেলে। তিনি পরিবারের সঙ্গে নয়াপল্টন মর্ডান ডায়গনস্টিক সেন্টারের পেছনে ৮৮/৩ নম্বর বাসায় থাকতেন। পল্টন কালভার্ড রোডে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে করে তিনি বার্গার বিক্রি করতেন। অন্যদিকে শাহীন ও আসলামের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। তারা দুজনই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের নয়াগাঁও এলাকায় ফার্নিচারের দোকানে বার্নিশের কাজ করতেন। ওই এলাকাতেই একটি ভাড়া বাসায় তারা থাকেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, অর্থের লেনদেন নিয়ে শাহীন ও আসলাম একেক সময় একেক কথা বলছেন। তবে শাহীন ও ভুক্তভোগী সুমন দুজনই ইয়াবা ব্যবসা করতেন। ইয়াবা ব্যবসার অর্থের লেনদেন নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। তাদের আগের অপরাধমূলক কর্মকা-ের বিষয়ে এখনো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়েও অনুসন্ধান চলছে। সুমনের মোটরসাইকেলটি গোপালগঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

About Author