ইতালি ফেরত ১৪২ জনকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে - Amader Bangladesh

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেনটাইনে থাকা ইতালি ফেরত ১৪২ জনের কারও শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যায়নি। তাদের মধ্যে যারা বাড়িতে যেতে চাচ্ছেন, তাদের যেতে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ।

শনিবার রাতে আশকোনা হজ ক্যাম্পে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ইতালিফেরত যে ১৪২ জনকে হজক্যাম্পে আনা হয়েছিল, তাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়েছে। কারও শরীরেই করোনার কোনো লক্ষণ নেই। এখন যারা বাড়ি যেতে চাচ্ছেন, তাদের যেতে দেওয়া হচ্ছে। রাত হয়ে গেছে বলে বা নিরাপত্তাজনিত কারণে যারা আজ যাবেন না, তারা কাল যাবেন। শনিবার রাতে হজ ক্যাম্পে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

ইতালি ফেরত এই ১৪২ জন নিজ বাসায়  ‘হোম কোয়ারেনটাইনে’ থাকবেন। বলেও জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে, পুলিশি ব্যবস্থায় তাদের বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে। তারা পথে যদি খাবারও কিনতে চান, তবে পুলিশের মাধ্যমে কিনতে হবে। তারা নিজেরা কিনবেন না।’

রাত সাড়ে নয়টার পর হজক্যাম্প থেকে একাধিক যাত্রীভর্তি বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপারিচালক জানিয়েছেন, এই ১৪২ জনকে নিজ নিজ বাড়িতে ১৪দিনের জন্য ‘বাধ্যতামূলক কোয়ারেনটাইনে’ থাকতে হবে।

শনিবার বিকেলে আরও ৫৯ জন ইতালি থেকে দেশে ফিরেছেন। তাদের গাজীপুরের মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে রাখার কথাও জানিয়েছেন মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ।

ইতালি ফেরত এই ৫৯ জনকে কোথায় রাখা হবে তা নিশ্চিত না করলেও আবুল কালাম আজাদ আরও জানান, আগামীকাল রোববার আরও প্রায় ১৫৫ জন লোকের ইতালি থেকে দেশে আসার কথা তারা শুনেছেন।

এর আগে শনিবার ইতালি থেকে দেশে ফিরে আসেন ১৪২ জন। আশকোনা হজক্যাম্পে কোয়ারেনটাইনে তাদের নিয়ে যাওয়া হলে প্রবাসীর কয়েকজন অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে হট্টগোল করেন। একপর্যায়ে তারা সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেন। অন্যদিকে, বাইরে থাকা তাদের স্বজনরাও এ বিক্ষোভে যোগ দেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের কাটাকাটিও  হয়। এর মিনিট দশেক পর পুলিশ তাদের ভেতরে সরিয়ে নেয়।

ইতালি ফেরত ব্যক্তিদের অভিযোগ, হজক্যাম্পে আনার পর তাদের নিয়ে কর্তৃপক্ষ কী করতে চায়, তা বলা হচ্ছে না। কেবল পানি ছাড়া তাদের কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় নিজ বাড়িতে কোয়ারেনটাইনে থাকতে চাওয়ার কথা জানান বিক্ষোভকারীরা।

ইতালি ফেরত এক ব্যক্তি গেটে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, তাদের রোমে পরীক্ষা করা হয়েছে। দুবাইয়ে আরেক দফা পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে করোনাভাইরাসের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশে আসার পর এখন এখানে রাখা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, এখানে তারা অমানবিক অবস্থার মধ্যে আছেন। শিশুরা আছে। কিন্তু কোনো খাবার পাওয়া যাচ্ছে না।

ইতালি ফেরত স্বজনকে নিতে এসেছেন এমন এক ব্যক্তি জানান, কেউ কিছু বলছে না। এদের কী করা হবে, তা–ও জানা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘একটা অদ্ভুত অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছি।’

এ বিষয়ে বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘কোনো বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেনি। ম্যানেজমেন্টের সাথে বিদেশফেরতদের একটু ভুল বোঝাবুঝি ঘটেছিল। তা আলোচনা করে ঠিক করা হয়েছে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আজ সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ইতালিফেরত বাংলাদেশিদের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাদের মধ্যে সংক্রমণের কোনো ঝুঁকি দেখা না গেলে হোম কোয়ারেনটাইনে রাখা হবে।

আশকোনা হজ ক্যাম্পে নেওয়ার পর আজ শনিবার দুপুরের দিকে ইতালিফেরত বাংলাদেশি ও তাঁদের অভিভাবকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তখন ইতালিফেরত লোকজন অভিযোগ করেন, হজ ক্যাম্পে আনার পর তাঁদের নিয়ে কর্তৃপক্ষ কী করতে চায়, তা বলছে না। শুধু পানি ছাড়া তাঁরা কোনো খাবার পাচ্ছেন না। তাঁরা নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকতে চান। হজ ক্যাম্প থেকে ইতালিফেরত লোকজন একপর্যায়ে বেরিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেন। পরে বেলা দুইটার পর থেকে এই বিক্ষোভ কমে আসে।

এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আজ সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ইতালিফেরত বাংলাদেশিদের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাঁদের মধ্যে সংক্রমণের কোনো ঝুঁকি দেখা না গেলে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।

About Author