রোকাইয়া তিথি, জবি প্রতিনিধি : নীতিমালা তৈরির দেড় বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য  চালু হয়নি ডিনস অ্যাওয়ার্ড। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ মেধাভিত্তিক এই পুরস্কারটি কবে নাগাদ চালু হবে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি কেউ। সংশ্লিষ্টদের দাবি বাজেট স্বল্পতা, সমন্বয়হীনতা, বিভাগগুলো থেকে যথাসময়ে সাড়া না পাওয়াসহ কয়েকটি কারণে অ্যাওয়ার্ডটি প্রদানের ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগছে।
সর্বশেষ সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে  গত ১৭ আগষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক ডিনদের এ বিষয়ে দ্রুত কাজ করতে নির্দেশ দিলেও তারা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি অ্যাওয়ার্ড৷
জানা যায়, ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ডিনস অ্যাওয়ার্ড চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৷ গঠন করা হয় ডিনস ফোরাম ৷ গত বছরের জুন মাসে চূড়ান্ত নীতিমালা প্রস্তুত হওয়ার কথা থাকলেও আগস্ট মাসে ডিনস ফোরামের ১১তম বৈঠকে সেটি চূড়ান্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০তম সিন্ডিকেট সভায় ডিনস অ্যাওয়ার্ড নীতিমালাটি অনুমোদিত হয়। নীতিমালা অনুযায়ী অ্যাওয়ার্ড প্রদানে শিক্ষার্থীদের তালিকা চেয়ে অক্টোবরে রেজিস্ট্রার দফতর থেকে প্রতি বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়।

তবে বিভাগগুলো থেকে নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তালিকা সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনের কাছে বিলম্বে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে ৷ কয়েকটি বিভাগ থেকে অসম্পূর্ন তালিকা পাঠানো হয় ৷ এতে করে যাচাই-বাছাইয়ে জটিলতা তৈরি হয়।

নীতিমালা অনুযায়ী, অনুষদের আওতাধীন প্রতিটি বিভাগ থেকে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জনকারী একজন শিক্ষার্থী অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হবে। অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হতে হলে স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষায় ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.৭৫ থাকতে হবে। একই বিভাগে একাধিক শিক্ষার্থী সমান সিজিপিএ অর্জন করলে তাদের প্রথম-অষ্টম সেমিস্টার পর্যন্ত প্রাপ্ত মোট নম্বর বিবেচনা করা হবে। এরপরও যদি সমতা থাকে তবে সেক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনা করে চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়ন পাবেন।

অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের স্নাতক শ্রেণির কোনো পুন:ভর্তি, কোনো কোর্সে মানোন্নয়ন এবং সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থাকতে পারবে না। কোনো সেমিস্টার পরীক্ষায় এক বা একাধিক কোর্সে ‘এফ’ গ্রেড থাকা যাবে না। এছাড়া প্রতিটি সেমিস্টারে শতকরা ৮০ ভাগ উপস্থিতিসহ স্নাতক অধ্যয়নকালে কোনো প্রকার আর্থিক, একাডেমিক অথবা শৃঙ্খলাবিষয়ক শাস্তিপ্রাপ্ত হওয়া যাবে না।

জানা যায়, চলতি বছর ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে (যোগ্যতাসাপেক্ষে প্রতি বিভাগ থেকে ১জন) ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে৷ অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মেডেল, সার্টিফিকেট এবং বিশেষ স্যুভিনিয়র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে৷

শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ডিনস অ্যাওয়ার্ড চালুর যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে খবরে আমরা সবাই খুশি ছিলাম। কেননা এর মাধ্যমে বিভাগগুলোতে প্রতিযোগিতা বাড়ত, সবার মধ্যে পাওয়ার আগ্রহ কাজ করত। তাছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খাতায় প্রাপ্তিটা যোগ হত। কিন্তু ঘোষণার এতদিন পরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটি চালু করতে পারেনি যা হতাশাজনক। আমরা আশা করছি প্রশাসন খুব দ্রুত ডিনস অ্যাওয়ার্ড চালুর বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিবে।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানায়, যারা ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ডিনস অ্যায়ার্ড পাওয়ার যোগ্য তারা ইতোমধ্যে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে গেছেন। এখন তারা কিভাবে পাবে। ঘোষণার এতদিন পরেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসাটা শিক্ষার্থীদের জন্য হতাশাজনক।
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ এন্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান খন্দকার বলেন, উপাচার্য ডিনদের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিলেন হঠাৎ তিনি অসুস্থ হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। দ্রুতই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।
বিজনেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো: গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা এই বিষয়টা নিয়ে ইতোমধ্যে কয়েকটি মিটিং করেছি, উপাচার্য অসুস্থ থাকায় কাজটি সফল হয়নি। তিনি আসলেই বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন আহমদকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।

About Author