রাজধানীর শনির আখড়া এলাকায় রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে ১০ লাখ টাকার ব্ল্যাকমেইল পরিকল্পনা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। মামলার প্রধান আসামি জরেজুল ইসলামের প্রেমিকা শামিমা আক্তার কোহিনুরের (৩৩) স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন।

এর আগে শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকালে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে শামিমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, ব্ল্যাকমেইলিং এবং লাশ গুমের পুরো সহযোগিতায় জড়িত ছিলেন।এদিকে এ ঘটনায় প্রধান আসামি জরেজকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন জানান, হত্যার পর একই ঘরে লাশ নিয়ে রাত্রিযাপন করেন জরেজ ও শামীমা। শামীমার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনির আখড়া এলাকা থেকে আশরাফুলের পায়জামা, পাঞ্জাবি, রক্তমাখা দড়ি, চাপাতিসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। তার মোবাইল থেকেও বেশ কিছু ভিডিও ও ছবি জব্দ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আশরাফুলকে হত্যার পর লাশ গোপন করার জন্য জরেজুল চাপাতি ও দুটি ড্রাম সংগ্রহ করেন। পরদিন লাশ খণ্ড করে দুটি ড্রামে ভরে হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের কাছে ফেলে যান তারা।

র‌্যাব জানিয়েছে, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করা। তবে হত্যাকাণ্ডের পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয় আছে কি-না, তা প্রধান আসামি জরেজকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পরিষ্কার হবে। এ সময় ধৃত শামীমা ও জরেজুলকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন।

 

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের পর অটোরিকশাযোগে তারা সায়দাবাদের দিকে রওনা হন। পরে শামীমাকে কুমিল্লায় চলে যেতে বলেন জরেজুল এবং তিনি রংপুর চলে যাবেন বলে জানান। শামীমা কুমিল্লায় চলে যাওয়ার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার রাত ১০টায় কুমিল্লা থেকে জরেজুলকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।

উল্লেখ্য, রংপুরে একই এলাকায় থাকার সুবাদে আশরাফুল ও জরেজুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। জরেজুলের মাধ্যমে আশরাফুলের পরিচয় হয় শামীমা আক্তারের সঙ্গে। ধীরে ধীরে আশরাফুল ও শামীমার মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে ঢাকার দক্ষিণ ধনিয়ায় জরেজুল যে বাসা ভাড়া নেন, সেখানে শামীমাও গিয়ে ওঠেন। জটিল সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তিনজনের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।

এক পর্যায়ে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে ক্ষিপ্ত হয়ে জরেজুল আশরাফুলকে হত্যা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার সময় শামীমাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানায় র‌্যাব।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে নীল রঙের দুটি ড্রামে আশরাফুলের ২৬ টুকরা মরদেহ পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিক পরিচয় শনাক্ত না হলেও পরে আঙুলের ছাপ নিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ।

আশরাফুল রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার ১০ বছরের একটি মেয়ে ও সাত বছরের একটি ছেলে রয়েছে। তার বাবার নাম মো. আবদুর রশীদ।