মাজহার মান্নান : প্রায়ই বলা হয় যে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। আমিও মানছি যে ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু বর্তমান বাজারের প্রেক্ষাপটে সেই ক্রয় ক্ষমতা কি অবস্থায় আছে সে খোঁজ কজন রেখেছে। প্রতিটি পন্যের দাম সীমা অতিক্রম করেছে। সবজির বাজার বেশ কিছুদিন ধরে চড়া। কোনমতেই দাম পড়ছে না। বন্যার অজুহাতে চললো বেশ কিছু দিন। এখন শীতের সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু দাম দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। পিয়াজ, মরিচ, রুসুন, আদা ও অন্যান্য মসলার দাম লাগামহীন। তেল, ডাল, চাল থেকে শুরু করে সকল নিত্য পন্যের দাম বেড়ে চলেছে। মনে হচ্ছে দেখার কেউ নেই। ব্যবসায়ীরা একে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে খালাস। বাজার সিন্ডিকেটের কথা আমাদের সবারই জানা আছে। পন্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পন্যের দাম বাড়ানোর নোংরা খেলা আমরা বছরের পর বছর দেখে আসছি। পন্যের এত দাম কিন্তু যে কৃষকরা এত কষ্ট করে সেটা উৎপাদন করলো তারা সেটার নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত। একদল ফরিয়া অসাধু ব্যবসায়ী পুরো সিস্টেমটাকে জিম্মি করে রাখে। নানা প্রকার খোঁড়া কারণের জিকির তুলে তারা পন্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সব দায় ক্রেতার ঘারে চেপে বসেছে। মরার উপর খাড়ার ঘা। বাজার নজরদারিতে কিছুটা তৎপরতা দেখা গেলেও সেটাকে পর্যাপ্ত বলা যায় না। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য টিসিবি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু টিসিবির সেবার আওতায় সবাইকে তো আনা সম্ভব হয়নি। কিছু মানুষ আছে যারা না পারে হাত পাততে, না পারে সংসার চালাতে। এরকম মানুষের সংখ্যা কম নয়। ক্রেতা ও বিক্রেতার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নতুন কোন বিষয় নয়। কিন্তু এর সমাধানটা কি? এভাবেই কি চলতে থাকবে। সাধারণ মানুষ আর কতকাল জিম্মি থাকবে। দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী তেমন পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়। বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা তাদের খেয়াল খুশিমত দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে।

কেউ যেন তাদের দেখার নেই। বাজারের বাস্তব চিত্র দেখে মনে হয় না যে পন্যের কোন সংকট আছে। প্রচুর সরবরাহ অথচ দাম বেশি।

Laws of Supply Demand নীতিটি কঠোরভাবে কার্যকর করা গেলে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যেতো। আমাদের দেশে পন্যের দাম ব্যাসায়ীদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। ভোক্তা অধিকার যেন উপেক্ষিত। পন্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকার আমদানী শুল্ক হ্রাস করলেও তা খুব একটা কাজে আসে না। পন্যের দাম উঠা নামার সাথে অনেকগুলি বিষয় জড়িত আছে। আন্তর্জাতিক বাজার, জ্বালানী খরচ, দুর্যোগ, পরিবহন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহ, প্রক্রিয়াজাতকরন সুবিধা, বাজারজাতকরন ও গুদামজাতকরন। এসব গুলি বিষয় স্বাভাবিক থাকলে পন্যের দাম বাড়ার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। তবে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি, দূর্নীতি, ঘুষ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের অবস্থানগত দুর্বলতা, ক্রেতাদের সচেতনতার অভাব, দুর্বল নজরদারি, কালোবাজারি, কালো টাকার প্রভাব, অতিরিক্ত মুনাফার লোভ পন্যের বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলে।

নিত্য পন্যের অনাকাঙ্খিত মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের মাঝে নাভিশ্বাস জন্মেছে। সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে নিত্য পন্যের দাম। এই অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সামাজিক আন্দোলন ছাড়া কোন গতি নেই। বাজার নজরদারি অনেকগুণ বাড়াতে হবে। পন্যের মূল্য তালিকা প্রতিটি হাট বাজারে টাঙিয়ে দিয়ে সেটা নজরদারি করতে হবে। দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে হবে। কোন ব্যবসায়ী বা ফরিয়া পন্যের দাম বেশি রাখলে তাকে যেন দ্রুত আইনের আওয়ায় আনা যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পন্য কেনার পরিধি আরও বাড়াতে হবে। এখনই লাগাম টেনে না ধরলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

About Author