নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশের বিভিন্ন উৎসব উদযাপনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ নানা ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করে সরকার। করোনার এ মহামারিকালে ইংরেজি নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনকে কেন্দ্র করে পুলিশের পক্ষ থেকে থাকছে নানা নির্দেশনা।

থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে নিজস্ব সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ঐতিহ্য বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া, পটকা, আতশবাজি ফোটানো, অশোভন আচরণ, বেপরোয়া গাড়ি ও মোটর সাইকেল চালানোর বিষয়ে আগের মতোই কড়াকড়িও থাকছে।

গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আাসাদুজ্জামান খান কামাল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক অনুষ্ঠানে নববর্ষ ঘিরে নিরাপত্তা বিষয়ে এক প্রশ্নে বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে; সবকিছু আছে নজরদারিতে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. ওয়ালিদ হোসেন বলেন, ‘থার্টিফার্স্ট নাইটে উন্মুক্ত স্থানে লোক সমাগম ও কোনো পার্টি করতে দেওয়া হবে না আর হোটেলে ডিজে পার্টির নামে কোনো কক্ষ ভাড়া দেওয়া যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘হোটেলগুলোতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানের কারণে রাস্তায় যেন অতিরিক্ত যানজটের সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থার্টিফার্স্ট নাইটে অনুষ্ঠান করা যাবে না। আজ সন্ধ্যা থেকে বারগুলো বন্ধ থাকবে।’

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম পুলিশ সদর দপ্তরে বড়দিন ও থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সমন্বয় সভায় একই ধরনের কথা বলেছিলেন।

সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ মজিফ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ‘থার্টিফার্স্ট নাইটে সাধারণত মফস্বলে তেমন কিছু হয় না। তবে যেহেতু শ্রীমঙ্গলসহ কিছু টুরিস্ট এলাকা রয়েছে, তাই কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে এবং জনসাধারণকে অতি জরুরি কাজ ছাড়া রাতে বের হতে নিরূৎসাহিত করা হবে।’

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ‘সারাদেশের পর্যটন এলাকাগুলোতে যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সব জেলায় সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

থার্টিফার্স্ট নাইটে ডিএমপির নির্দেশনা

থার্টিফার্স্ট নাইটে পটকাবাজি, আতশবাজি, বেপরোয়া গাড়ি, মোটরসাইকেল চালনাসহ যেকোনো ধরনের অশোভন আচরণ এবং বেআইনি কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি। তাদের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে-

১. ঢাকা মহানগরের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার স্বার্থে রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার, রাস্তায়, ভবনের ছাদে এবং প্রকাশ্য স্থানে কোনো ধরনের জমায়েত, সমাবেশ, উৎসব করা যাবে না।

২. উন্মুক্ত স্থানে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান বা সমবেত হওয়া যাবে না বা নাচ, গান ও কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না।

৩. কোথাও কোনো ধরনের আতশবাজি বা পটকা ফাটানো যাবে না।

৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ধ্যা ৬টার পরে বহিরাগত কোনো ব্যক্তি বা যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না।

৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গাড়ি নির্ধারিত সময়ের পর পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। তবে পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে নীলক্ষেত ক্রসিং দিয়ে পায়ে হেঁটে প্রবেশ করতে পারবে।

৬. গুলশান ও বনানী এলাকায় রাত ৮টার পর বহিরাগতরা প্রবেশ করতে পারবে না। তবে ওই এলাকায় বসবাসরত নাগরিকরা নির্ধারিত সময়ের পর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ (কাকলী ক্রসিং) এবং মহাখালী আমতলী ক্রসিং দিয়ে পরিচয় দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।

৭. একইভাবে উপর্যুক্ত সময়ে সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় যেসব নাগরিক বসবাস করেন না, তাদেরকে বর্ণিত এলাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরূৎসাহিত করা হচ্ছে।

৮. রাত ৮টার পর হাতিরঝিল এলাকায় কাউকে অবস্থান করতে দেওয়া হবে না।

৯. গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় বসবাসরতদের ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টার মধ্যে স্ব-স্ব এলাকায় প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

১০. ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার পর ঢাকা মহানগরীর কোনো বার খোলা রাখা যাবে না।

১১. রাত ১০টার পর সব ফাস্ট ফুড দোকান বন্ধ থাকবে।

১২. সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সীমিত আকারে আবাসিক হোটেলগুলোতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান করতে পারবে। তবে কোনো ক্রমেই ডিজে পার্টি করতে দেওয়া যাবে না।

১৩. ইংরেজি নববর্ষের প্রাক্কালে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ জানুয়ারি ভোর ৬টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, জনসমাবেশ ও উৎসবস্থলে সব ধরনের লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবে  না।

এসব নির্দেশনা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছে ডিএমপি।

ট্রাফিক ডাইভারশন

১. ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টা থেকে পরদিন ভোর ৫টা পর্যন্ত গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় যানবাহনে করে প্রবেশের জন্য কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ (কাকলী ক্রসিং) এবং মহাখালী আমতলী ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে। সেক্ষেত্রে গুলশান, বনানী ও বারিধারায় বসবাসরতদের রাত ৮টার মধ্যে ওই এলাকায় প্রবেশ করতে হবে।

২. রাত ৮টা থেকে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে মহাখালী এলাকা-ফিনিক্স রোড ক্রসিং, বনানী ১১ নম্বর রোড ক্রসিং, চেয়ারম্যান বাড়ি ক্রসিং, ঢাকা গেইট, শুটিং ক্লাব, বাড্ডা লিংক রোড, ডিওএইচএস বারিধারা-ইউনাইটেড হাসপাতাল ক্রসিং ও নতুন বাজার ক্রসিং ওই সব এলাকায় প্রবেশের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। তবে ওই এলাকা থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে এসব ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে।

৩. একইভাবে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত শুধুমাত্র শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানবাহন নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।

৪. ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে টিএসসি, রোমানা স্কয়ার, ঢাকা মেডিকেল সেন্টার, জগন্নাথ হল ক্রসিং, ভাস্কর্য ক্রসিং, পলাশী ক্রসিং, বকশী বাজার ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং এবং শহিদুল্লাহ হল ক্রসিং দিয়ে কোনো ধরনের যানবাহন প্রবেশ করবে না, শুধু বের হওয়ার ক্ষেত্রে এসব ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে।

৫. হাইকোর্ট ক্রসিং থেকে আগত সব যানবাহন দোয়েল চত্বর থেকে বামে মোড় নিয়ে শহিদুল্লাহ হল হয়ে চাঁনখারপুল ক্রসিং দিয়ে বের হয়ে যেতে পারবে।

৬. কেউ বেপরোয়া, মদ্যপ ও বিপজ্জনক অবস্থায় গাড়ি চালালে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

৭. সড়ক ব্যবহার সংক্রান্তে যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে ফোন করার আহ্বান জানানো হয়- ডিসি ট্রাফিক (গুলশান)-০১৩২০-০৪৪৩৬০, এডিসি ট্রাফিক (গুলশান)-০১৩২০-০৪৪৩৬১, এসি ট্রাফিক (গুলশান)-০১৩২০-০৪৪৩৭২, এসি ট্রাফিক (মহাখালী)-০১৩২০-০৪৪৩৭৫, ডিসি ট্রাফিক (রমনা)-০১৩২০-০৪২২৬০, এডিসি ট্রাফিক (রমনা)-০১৩২০-০৪২২৬১, ডিসি (গুলশান)-০১৩২০-০৪১৪২০ ও ডিসি (রমনা)-০১৩২০-০৩৯৪৪০।

যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের সাহায্য গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

About Author