নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর দক্ষিণখানে চাঞ্চল্যকর হেলাল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনসহ এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ঘটনার মূল অভিযুক্ত চার্লস রুপম সরকারকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম।

আজ সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আব্দুল বাতেন। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর রুপমের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো বটি, ছুরি, ডিশের তার ও ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।’

কীভাবে কী ঘটেছিল-
গত ১৪ জুন দুপুরে খুন হন আজমপুর মধ্যপাড়া মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের বিকাশ ও মোবাইল রিচার্জের ব্যবসায়ী হেলাল। কীভাবে তিনি খুন হলেন এবং ছায়া তদন্তের মাধ্যম কীভাবে তার খুনিকে গ্রেপ্তার করা হলো- সে বর্ণনা দিয়েছেন ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আব্দুল বাতেন।

ডিএমপির সংবাদ সম্মেলনে বাতেন জানান, গত ১৫ জুন উত্তরার দক্ষিণখান এবং বিমানবন্দর থানা এলাকায় এক অজ্ঞাত যুবকের খণ্ডিত ধর এবং কোমর থেকে পায়ের অংশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। ফিঙ্গার ইম্প্রেশনের মাধ্যমে যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরে হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করে।

তদন্তের একপর্যায়ে সিসিটিভির ফুটেজ, তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুজন নারীকে শনাক্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ। গত ১৭ জুন দক্ষিণখান থানা এলাকা হতে শনাক্তকৃত নারী রাশেদা আক্তার এবং মনি সরকারকে গ্রেপ্তার করে বিমান বন্দর জোনাল টিম। গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্য মতে দক্ষিণখানের জামগড়া এলাকার একটি ডোবাসংলগ্ন ডাস্টবিন থেকে ভিকটিমের খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করা হয়। তাদের কাছ থেকে লুট হওয়া ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করার পাশাপাশি মূল আসামি চার্লস রুপম সরকার কখন, কোথায়, কীভাবে ভিকটিমকে হত্যা করে মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় গুম করে রেখেছিল তা বিস্তারিতভাবে জানা যায়। হত্যাকাণ্ডের পর লুট করা টাকার অংশবিশেষ নিয়ে আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করছিল রুপম।

গ্রেপ্তারকৃত রুপমকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, হত্যাকাণ্ডের দিন দুপুরে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল করে বেলালকে ফটোস্ট্যাট মেশিন কিনতে যাওয়ার কথা বলে রুপম সরকার তাকে নিজের বাসায় আসতে বলে। বাসায় আসার পর চার্লস রুপম সরকার এবং তার স্ত্রী মনি সরকার হেলালকে চা পান করতে দেয়। চায়ে দুটি ঘুমের বড়ি মিশিয়ে দেওয়া হয়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে হেলাল ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর তার গলায় ডিশের তার পেঁচিয়ে রুপম-মনি দুই দিক থেকে টেনে হেলালের মৃত্যু নিশ্চিত করে।

হত্যার পর হেলালের বিকাশ এবং নগদ একাউন্টে রক্ষিত টাকা থেকে ৪৩ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয়। স্ত্রী মনিকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে শাশুড়ি রাশেদার কাছে পাঠিয়ে দেয় রুপম। পরে নিজের বাথরুমে নিয়ে হেলালের লাশটি ধারালো ছুরি দিয়ে টুকরো টুকরো করে রাতের বেলায়ই শপিং ব্যাগে করে খণ্ডিত মাথাটি রেখে দেয় ভূঁইয়া কবরস্থান সংলগ্ন ডোবার ডাস্টবিনের মধ্যে। পরের দিন সকাল সাড়ে ৯টায় লাশের অবশিষ্ট অংশ বস্তায় ভরে একটি অটোরিকশায় করে উত্তরার বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রেখে আসে।

পুলিশ জানায়, নিহত হেলাল একজন কোরআনে হাফেজ এবং নারায়ণগঞ্জের এক মাদ্রাসায় ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে সে দক্ষিণখান এলাকায় ফ্লেক্সিলোড, মোবাইল কার্ড ক্রয়-বিক্রয় করতো। সম্প্রতি মোবাইল সিম, ফ্লেক্সিলোডের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য খাতা কলম, স্টেশনারি এবং খেলনা সামগ্রী বিক্রয়ের ব্যবসা করছিলেন তিনি।

About Author