রাবি ছাত্রকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় ২ শিবির ক্যাডার গ্রেপ্তার - Amader Bangladesh
নিজস্ব প্রতিদেক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নাফিউল হক নাফি ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় দুই ছাত্রশিবির ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। শুক্রবার রাতে র‌্যাব-৫ এর একটি দল নগরের মতিহার থানার জাহাজঘাট এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। শনিবার দুপুরে র‌্যাব-৫ এর সদরদপ্তরে তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, নগরের মতিহার থানার খোজাপুর এলাকার আব্দুল ওহাবের ছেলে সালাউদ্দিন বাপ্পি (২৭) ও একই এলাকার আজিমুদ্দিনের ছেলে নবাব শরীফ (২৭)। তারা দুইজনই উগ্রবাদি রাজনীতিক দলের সঙ্গে জড়িত বলে র‌্যাব জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে: কর্ণেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, রাবি ছাত্র নাফিউল হক নাফিকে ছুরিকাঘাত করা হত্যার উদ্দেশ্যে। এনআর ছাত্রাবাসে নামাজপড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র তাকে এলোপাথারিভাবে মারপিটসহ ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করলে তার হাতে ও পায়ের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে ৮/১০ জন উপস্থিত ছিল।
রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, এ ঘটনায় নাফির ঘনিষ্ঠ বন্ধু শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে মতিহার থানায় মামলা দায়ের করে। মামলায় ঘটনার মূলহোতা রমজান ও মেস মালিক নাজমুলসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও অজ্ঞাত আরও ৮/১০ জনকে আসামী করা হয়েছে এ মামলায়।
তিনি বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে নগরীর মতিহার থানাধান জাহাজঘাট মোড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার সালাউদ্দিন বাপ্পী মসজিদ মিশন একাডেমী স্কুল থেকে মানবিক বিভাগে ২০১০ সালে এসএসসি পাস করেন। পরে বিনোদপুর ইসলামীয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করেন। রাজশাহী নিউ গর্ভমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিষয়ে ২০১৬ সালে অনার্স পাস করেন। বর্তমানে ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিষয়ে রাজশাহী কলেজে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। সে ২০১৪ সালে উগ্রবাদী ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে সে বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত। অপর আসামী নবাব শরীফ মির্জাপুর হাইস্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। বর্তমানে সে কাপড়ের দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। তার ভাই আব্দুস সালাম (৪২) হত্যা মামলার যাবজ্জীবন এবং অপর ভাই জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামী। সেও উগ্রবাদী রাজনীতির সাথে জড়িত।
র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথাটি স্বীকার করেছে। এছাড়াও ওই ঘটনায় ৫/৭ জন সরাসরি জড়িত ছিল বলেও তারা র‌্যাবকে জানিয়েছে। অন্যরা পালাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।
গত ৬ মার্চ রাজশাহীর বিনোদপুরে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাফিউল হক নাফি গুরুতর আহত হন তিনি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলের থাকেন। পরের দিন নাফিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আরেক ছাত্র শরীফ বিনোদপুরের এনআর ছাত্রাবাসে থাকতেন। ওই মেসের ছাত্রদের মসজিদে গিয়ে নামাজ পাড়া বাধ্যতামূলক। তবে পরীক্ষার জন্য বেশী পড়াশোনা করতে গিয়ে মেসে নামাজ পড়া নিয়ে ওই ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীর সঙ্গে শরীফের বিরোধ বাধে। ওই ছাত্ররা শরীফের কক্ষের সামনে হট্টগোলও করে। এ বিষয়ে শরীফ ওই মেসের মালিকের কাছে অভিযোগ করেছিলেন।
বুধবার রাতে মেসের মালিক, শরীফ, নাফিসহ পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী বিষয়টি সমাধান করতে আলোচনায় বসেন। আলোচনার শেষদিকে ওই কক্ষে কয়েকজন স্থানীয় তরুণ ঢোকেন। এক পর্যায়ে তারা শরীফ ও নাফিসহ ক্যাম্পাস থেকে যাওয়া ছাত্রদের মারধর শুরু করে।
এ সময় সবাই ওই কক্ষ থেকে পালিয়ে গেলেও ছাত্রবাসের সামনে নাফিকে ধরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন। প্রথমে নাফিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেয়া হয়। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়।

About Author