শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ কবে - Amader Bangladesh

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এরই মধ্যে অনেক দেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ এখনো তেমন কোনো ঘোষণা দেয়নি। সরকার বলছে, দেশে এখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। তবে সরকারের এই আশ্বাসে আতঙ্ক কমছে না অভিভাবকদের। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে। রিটে দেশের বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরগুলোও বন্ধে চাওয়া হয়েছে নির্দেশনা। গতকাল রবিবার সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ এই রিট করেন। এতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, শিক্ষা সচিব, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে। আজ সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতিমহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির জন্য রিটটি উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।

ইউনুছ আলী বলেন, দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় যদি শিক্ষার্থীরা করোনায় আক্রান্ত হয়, তা হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তাই স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবিতে রিট করা হয়েছে। আর দেশের সীমান্ত এলাকা বিশেষ করে স্থল, নৌ এবং বিমানবন্দর দিয়ে মানুষের যাতায়াত অব্যাহত রয়েছে। তাই এসব বন্দরও বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য প্রতিদিনই অভিভাবকদের দাবির মুখে পড়ছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছেন ক্যাম্পাস বন্ধের দাবিতে। প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা বলছেন, এ বিষয়ে তারা অপেক্ষা করছেন সরকারি সিদ্ধান্তের। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হবে কিনা তা নিয়ে তারা অপেক্ষা করছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সুপারিশের। কিন্তু এমন বক্তব্যের বিরোধিতা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ না খোলা রাখবে, সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি বৈঠক শেষে গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক এরই মধ্যে নিজ দপ্তর থেকে বিভিন্ন স্কুলে খোঁজ নিয়েছেন। এ সময় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, অভিভাবকদের তীব্র দাবির সম্মুখীন হচ্ছেন তিনি। বেশিরভাগ অভিভাবক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ চান। অনেক অভিভাবক সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে অধ্যাপক গোলাম ফারুক বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত এখনো পাইনি। আমরা আইইডিসিআরের পর্যবেক্ষণ অনুসরণ করছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তের সঙ্গে কিছু ব্যাপার আছে। এটা নিয়ে যদি আতঙ্ক ছড়ায়, সেই ভয় আছে। এ পর্যন্ত তো আমাদের স্থানীয় কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি। সনাক্তদের সবাই বিদেশ ফেরত।’

করোনা ইস্যুতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গতকাল ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁঁকি নিয়ে সরকার সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ঝুঁকি বিশ্লেষণের একটি অংশ। প্রতিনিয়ত অবস্থা বিশ্লেষণ হচ্ছে। সর্বশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারে আমরা বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়েই এগোচ্ছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে মন্ত্রণালয় সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’ উপমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শহরাঞ্চল, গ্রামাঞ্চল একেক জায়গায় সংক্রমণ ঝুঁঁকি একেক ধরনের হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে আমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, আমরা যৌথ আলোচনা করে সেভাবেই এগোচ্ছি। সরকারের কোনো সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্তে রোগ সংক্রমণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা হয় না। সবার প্রতি আহ্বান, সরকারের সিদ্ধান্তগুলোর ওপরে চোখ রাখুন এবং তা মেনে চলুন।’

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আমাদের এখানে স্থানীয় পর্যায়ে কোনো সংক্রমণ নেই। বিদেশ থেকে সংক্রমণ বয়ে নিয়ে আসা সেটি আমরা বন্ধ করার চেষ্টা করছি। যদি কখনো এমন অবস্থা দেখা যায় যে স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। অনেকেই আতঙ্কিত হচ্ছেন। সবার কাছে বিনীত অনুরোধ করব আতঙ্কিত হবেন না এবং আতঙ্ক ছড়াবেন না।’

About Author