বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস পালন - Amader Bangladesh

প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ রোববার বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সে হিসাবে এ বছর
জানুয়ারি মাসের ৩০ তারিখ বাংলাদেশের অন্যান্য জেলাসহ রাঙামটি জেলায় এবং দিবসটি পালিত হয়।
কুষ্ঠরোগের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই দিবস পালন করা হয়।
এই দিবসের উদ্দেশ্য হলো কুষ্ঠ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করা।
জনবিচ্ছিন্ন কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমাজে পুনঃগ্রহণ, সর্বপ্রকার কুষ্ঠজনিত কুসংস্কার দূরীকরণ, এই সকল
লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে জনসাধারণ এবং কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য ও শিক্ষা প্রদান করাই হচ্ছে এই
দিবসের লক্ষ্য।
অদ্য রবিবার সকাল ১০.০০ঘটিকায় দ্য লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল -বাংলাদেশ (টিএলএমআই-বি) এর
সহযোগীতায় রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগ এর আয়াজনে রাঙামাটি সিভিল সার্জন অফিসের হলরুমে এই
দিবস উপলক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আলোচনা সভা ও স্টেডিংর‌্যালী আয়োজন করা হয়। উক্ত সভা
সভাপতিত্ব করেন রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডাঃ বিভাস খীসা তিনি বলেন কুষ্ঠ সাধারণত
চিকিৎসাবিহীন সংক্রামক ধরনের রোগীর হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়ায় এবং আক্রান্ত রোগীর প্রান্তিক স্নায়ুর
কার্যকারিতা নষ্ট করে। ফলে আঙ্গুল বাঁকা হওয়া, মুখের প্যারালাইসিস, বেদনাহীন ঘা ইত্যাদি বিকলাঙ্গতা
দেখা দেয় এবং রোগীর শারীরিক সমস্যার চেয়েও মানসিক ও সামাজিক সমস্যা ও বৈষম্য প্রকটরূপে দেখা
দেয়। চামড়ার অবশ দাগ দিয়ে এই রোগ শুরু হয়, অনেক সময় দানা গুটিও দেখা দেয়। তিনি আরো বলেন
কুষ্ঠরোগ একটি মৃদু সংক্রামক রোগ। দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়।
দারিদ্র্য, অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, প্রচুর আলো বাতাসের অভাব ইত্যাদি এই রোগ সংক্রমণের
অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। তাই সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য
বিভাগের ডাঃ বিনোত শেখর চাকমা, ডাঃ সুশোভন চাকমা এনজিও কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মীগন।
স্বাগত বক্তব্যদেন ডাঃ জীবক চাকমাতিনি বলেন বাংলাদেশে এই বছর উক্ত দিবসটি পালনের গুরুত্ব
রয়েছে, কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১১ ডিসেম্বর রাজধানীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় কুষ্ঠ সম্মেলনে
বক্তৃতাকালে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে কুষ্ঠমুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। কুষ্ঠ
মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন রোগ। মানব সভ্যতার বিকাশ ও সামাজিক উন্নতির সাথে সাথে উন্নত
দেশগুলোতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব একবারেই কমে এসেছে। কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে
কুষ্ঠরোগের প্রাদুর্ভাব এখনও রয়ে গেছে। দ্য লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল -বাংলাদেশ (টিএলএমআই-বি)
এর মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতি বছর প্রায় ৩৫০০ থেকে ৪০০০ নতুন কুষ্ঠরোগাক্রান্ত ব্যক্তি
বাংলাদেশে শনাক্ত হচ্ছে। এদের মধ্যে প্রায় ৮-১০% সময়মতো চিকিৎসার অভাবে পরবর্তীতে পঙ্গ হয়ে যায়।
১৮৭৩ সালে নরওয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. আরমার হ্যানসেন কুষ্ঠরোগের জীবাণু ‘মাইকোব্যাকটেরিয়াম
লেপ্রী’ আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কারের ফলে প্রমাণিত হয় যে, কুষ্ঠ একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ,
জন্মগত, বংশগত বা অভিশাপের ফল নয়। হাজার হাজার বছর ধরে কুষ্ঠরোগ ও কুষ্ঠরোগাক্রান্ত ব্যক্তিগণকে
অভিশপ্ত এবং অস্পৃশ্য বলে গণ্য করা হতো এবং অনেককেই দীপান্তরিত, বনবাস, গৃহচ্যুত করা হতো।
বিকলাঙ্গতাই হচ্ছে কুষ্ঠজনিত সকল সামাজিক ও শারীরিক সমস্যার প্রধান কারণ। তাই প্রাথমিক লক্ষণ দেখা
দেয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসায় আসা অতীব জরুরি প্রতিটি আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য। কুষ্ঠরোগ প্রাথমিকভাবে
পর্যায়ে চিহ্নিত হলে ও চিকিৎসার আওতায় আসলে কুষ্ঠজনিত প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। ব্যাপক

সচেতনতা কার্যক্রম এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে রোগী খুঁজে বের করার জন্য প্রশিক্ষিত
লোকবলের অভাব, এই রোগকে ঘিরে কুসংস্কার দূরীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সচেতনতামূলক কার্যক্রম এর
অভাব আছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত সমাজে কুসংস্কার ও বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন। এর ফলে
তাদের রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, আরোগ্যলাভ এবং সামাজিক কার্যাবলি ব্যাহত হয়। এই রোগ এককভাবে
নির্মূল করা সম্ভব নয়। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব প্রয়োজন।
আমাদের একযোগে অসহায়, দরিদ্র, নিপীড়িত কুষ্ঠরোগাক্রান্ত মানুষগুলোর জন্য কাজ করতে হবে। কারণ
এতগুলো মানুষকে বঞ্চিত রেখে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কুষ্ঠরোগাক্রান্ত প্রতিবন্ধী
মানুষগুলোর পুনর্বাসন এবং সঠিক যত্নের জন্য তাদের পাশে দাঁড়ানো একান্ত প্রয়োজন। যেন আক্রান্ত ব্যক্তিরা
পরিপূর্ণ মর্যাদা ও অধিকারের সঙ্গে সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারেন। কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও
প্রতিবন্ধিরা দেশের বোঝা নয়, তাদেরও রয়েছে সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা পাওয়ার অধিকার। ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশকে একটি কুষ্ঠমুক্ত দেশ হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই।

About Author