তরমুজের নতুন দুটি জাত উদ্ভাবন - Amader Bangladesh

গাজীপুর প্রতিনিধি : দেশেই বীজ উৎপাদন সম্ভব এমন দুটি তরমুজের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীরা। বারির সবজি বিভাগ এবং পটুয়াখালির আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে এ দুটি জাত উদ্ভাবন করা হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত বিশুদ্ধ লাইন থেকে উদ্ভাবিত এ দুটি ওপি (ওপেন পলিনেটেড) জাতের একটির ভিতরে (মাংসল অংশ) হলুদ এবং অপরটির ভিতরে টকটকে লাল। শিগগিরই এ দুটি জাত নিবন্ধনের মাধ্যমে অবমুক্ত করা হবে বলে জানান বিজ্ঞানীরা।

গতকালর সকালে এ দুটি জাতের গবেষণা মাঠ পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার এবং বারির মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলাম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বারির পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. মিয়ারুদ্দীন, পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) ড. মো. কামরুল হাসান, পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ) ড. মুহাম্মদ সামসুল আলম, সবজি বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফেরদৌসি ইসলাম, জাত উদ্ভাবনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন বিভাগের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তারা।

জাত উদ্ভাবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বারির বিজ্ঞানীরা জানান, বারি উদ্ভাবিত জাত দুটি থেকে কৃষক নিজেই বীজ উৎপাদন করতে পারবে। এদের ফলন, আকৃতি, স্বাদ ও মিষ্টতা ছাড়াও এ জাত দুটি বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী এবং অমৌসুমী জাত হওয়ায় কৃষক এখান থেকে অধিক লাভবান হবে। হাইব্রিড জাত হিসেবে মুক্তায়িত হওয়ার পর ব্যাপক সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলে বীজ আমদানী বাবদ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচানো সম্ভব হবে এবং তরমুজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

নতুন উদ্ভাবিত জাত নিয়ে পটুয়াখালীর লেবুখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের এই উদ্যান গবেষণা কেন্দ্রে ২০১৫ সাল থেকে তরমুজ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চলছে। এরই মধ্যে আমরা নতুন দুটি জাত উদ্ভাবন করেছি, যেগুলোর মধ্যে একটি লাল এবং অপরটি হলুদ রঙের। সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় বিভাগ থেকে আমরা আশা করছি, এ মাসে বিজ অবমুক্তের অনুমতি পাব। নতুন উদ্ভাবিত তরমুজের চাষাবাদ দেশীয় অন্যান্য তরমুজের মতো। তবে প্রচলিত তরমুজের চেয়ে নতুন হাইব্রিড এই তরমুজে ফলন বেশি হয়। নিয়মমত চাষাবাদ করলে প্রতি হেক্টরে ২৫-৩০ টন তরমুজ আবাদ করা সম্ভব। তরমুজের মৌসুমে প্রতিটি লাল তরমুজ ৬-৮ কেজি এবং মৌসুম ছাড়া ৪-৬ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। হলুদ তরমুজ মৌসুমে ৪ কেজি এবং মৌসুম ছাড়া ৩-৩.৫ কেজি হয়। এই তরমুজ খেতে অনেক সুস্বাদু, রোগ বালাই কম হয়। বিদেশ থেকে আমরা যে তরমুজের বিজ আমদানি করি, এই তরমুজ তার সমকক্ষ। বিশেষ করে হলুদ তরমুজটা আমাদের দেশের উপযোগী, দেশের আবহওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উৎপাদন সম্ভব।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সবজি বিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানীরা অনেক অক্লান্ত পরিশ্রম করে তরমুজের হাইব্রিড এবং ওপেন পলিনেটেড জাত উদ্ভাবন করেছেন। নতুন উদ্ভাবিত তরমুজের বীজ আমরা দেশেই উৎপাদন করেছি। যেহেতু এটি দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে এবং দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে উপযোগী, সেহেতু কৃষকদের এখানে প্রতারিত হওয়ার কিছু নাই। আর ওপেন পলিনাইট জাতের তরমুজের বিজ কৃষকরা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারবেন।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, ‘দেশে তরমুজ একটি লাভজনক ফসল। চরাঞ্চল এবং বিশেষ করে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলে এমনকি ইশ্বরগঞ্জ, নওগা এলাকায় তরমুজের চাষ হচ্ছে এবং কৃষকরা রমজান মাসের আগেই এটি তৈরি করে। সারা বছরই তরমুজ এখন বাজারে পাওয়া যায়। তরমুজের জন্য আমাদের বিঘা প্রতি খরচ হয় ১৫-২০ হাজার টাকা কিন্তু এখান থেকে আমরা দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভবান হতে পারি।’

About Author