খালেদা দেখে যাওয়ার পরই আইভি চাচিকে মৃত ঘোষণা করা হয় - Amader Bangladesh

বাসস : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নৃশংসতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘মৃত্যু শয্যায় থাকা নারী নেত্রী আইভি রহমানকে খালেদা জিয়া সিএমএইচ এ দেখতে যাবেন বলে তার পুত্র-কন্যাদের ৩/৪ ঘণ্টা অন্য একটি রুমে আটকে রাখা হয়। খালেদা জিয়া আইভি রহমানকে সিএমএইচ এ দেখে আসার পরপরই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঠিক জানি না কখন কোন মুহূর্তে তিনি (আইভি রহমান) মৃত্যুবরণ করেছেন। তার ছেলে-মেয়েরা তার কাছে ছিল। সে সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাকে দেখতে যাবেন বলে তার ছেলে-মেয়েরা যারা বেডের কাছে ছিল তাদের একটা কামরার মধ্যে নিয়ে তালা মেরে রাখে।’ খালেদা জিয়া চলে যাবার পরই আইভি রহমানকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এ দিনটি ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মারাত্মকভাবে আহত আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও নারী নেত্রী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তার কথা স্মরণকালে একথা বলেন।

 

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করছিলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রের পরিকল্পনা বিভাগে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের দিনে আমার আইভি চাচির কথাই বেশি মনে হচ্ছে। আর একটা অবাক কাণ্ড আপনারা হয়তো জানেন না, তাকে যখন সিএমএইচএ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) নিয়ে যাওয়া হয় আমরা ঠিক জানি না কখন কোন মুহূর্তে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তার ছেলে-মেয়েরা তার কাছে ছিল। সে সময় তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাকে দেখতে যাবেন বলে তার ছেলে-মেয়েরা যারা বেডের কাছে ছিল তাদের একটা কামরার মধ্যে নিয়ে তালা মেরে রাখে। প্রায় ৩/৪ ঘণ্টা নাজমুল হাসান পাপন, বোন তানিয়া, ময়না এদের সবাইকে একটা রুমে তালা দিয়ে রেখে তার পর খালেদা জিয়া যান আইভি রহমানকে দেখতে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘আর খালেদা জিয়া যখন দেখে ফিরে আসেন তার পরই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয় আইভিকে। একথাটা অনেকেরই জানা নেই, আমি এটা জানিয়ে রাখলাম। যে কতবড় নৃশংসতা এরা করতে পারে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু হত্যার চেষ্টাই না, হত্যার পর লাশ নিয়েও তারা যে কর্মকাণ্ড করেছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মারা যাওয়ার পর অনেকের লাশ তারা দিতে চায়নি। লাশ আত্মীয়-স্বজনের কাছে তারা দেয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজে দলের সমর্থক এবং যারা জীবিত তারা যেহেতু সাহায্য করতে যায় এবং সারারাত তাদের চেষ্টার পর একে একে সেই লাশগুলো হস্তান্তর করে।’

শেখ হাসিনা ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের দেশে বিদেশে চিকৎসা প্রদানসহ তাদের সুবিধা অসুবিধায় পাশে দাঁড়িয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘একে একে অনেকেই আজ ছেড়ে চলে গেছেন।’

তিনি বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের তিনি দেশে, ভারতে এবং অন্য দেশে পাঠিয়েও চিকিৎসা করান। যাদের অনেকেই আজ আর নেই মারা গেছেন। অনেকেই পঙ্গু হয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘আহতদের আমরা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে সহায়তা দিয়েছি এবং সে সময় একটা আলাদা একাউন্ট খুলে যে ফান্ড এসেছে তা থেকে চিকিৎসাধীন প্রত্যেককে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি এবং এখনও আমরা দিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আহত যাদের চিকিৎসার প্রয়োজন তাদের সহায়তা দিচ্ছি। মাসোহারা দিচ্ছি, তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা, বিয়ে-শাদী যত রকমের সহযোগিতা দরকার আমি এখনও তা করে যাচ্ছি। যাদের খুব খারাপ অবস্থা ছিল আর্থিকভাবে তাদের সাহায্য এখনও অব্যাহত আছে।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমানসহ সকলের জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আইভি চাচিসহ যারা মারা গেছেন তাদের সবার জন্য দোয়া চাই।’

২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধি শান্তি সমাবেশে এক ডজনের ও বেশি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয় এবং এই হামলায় তিনি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও তার শ্রবণেন্দ্রিয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা এবং নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ দলের ২২ নেতা-কর্মী নিহত এবং অন্তত ৫০০ নেতা-কর্মী, পথচারি ও সাংবাদিক আহত হন।

About Author