ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়তে হয় তাই এলএসডি - Amader Bangladesh

নিজস্ব প্রতিবেদক : নতুন তারুণ্যনাশক মাদক ‘লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাই-ইথালামাইড (এলএসডি)’ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে অন্তত ১৪-১৫টি গ্রুপ সক্রিয় বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। গ্রুপের সদস্যরা ইয়াবাসহ অন্য মাদকদ্রব্য কারবারে জড়িত। পুলিশ বলছে, ইয়াবার কেনাবেচা, বহনের সময় প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়তে হয় বলে এরা অতি অপরিচিত এবং সবার চোখ ফাঁকি দিতে সক্ষম মাদক ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছে।

পুলিশ বলছে, ইয়াবা থেকেও ভয়ঙ্কর এলএসডি বিক্রি করতে সক্রিয় চক্রগুলো ফেসবুকে গ্রুপ খুলে এ বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুরুতে এসব গ্রুপের সদস্যরা নিজেরা সেবনের পাশাপাশি বন্ধুদেরও এই ফাঁদে ফেলতে উদ্বুদ্ধ করে। উদাহরণ দেওয়া হয় পশ্চিমা বিশ্বের তরুণদের মতো মানসিক বিকাশের। তবে বাস্তবিক এলএসডি মাদক সেবনে কল্পনায় অন্য জগৎ দেখা গেলেও মানসিক শক্তি ভেঙে যায়। মস্তিষ্কে প্রচ- রকমের আঘাত হানায় আত্মঘাতী হতে বাধ্য হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর তদন্তে এলএসডি নামের মাদকের সন্ধান পায় পুলিশ। পরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর পর গত রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এলএসডিসহ আরও পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগ।

মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আবদুল আহাদ বলেন, আটক আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি, এই মাদকের বাজার তৈরি করতে ১৪-১৫টি গ্রুপ দেশে সক্রিয় রয়েছে। বাকি গ্রুপগুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। আশা করি, সব গ্রুপকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। পুলিশের ভাষ্য, এলএসডি দামি মাদক হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কলেজ পড়–য়াদের টার্গেট করে বাজার তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গ্রুপগুলোর সদস্যরা। তদন্তেই একটি ফেসবুক গ্রুপ পর্যালোচনা করে সেখানে প্রায় এক হাজারের মতো সদস্যের অস্তিত্ব দেখা গেছে।

এদিকে এলএসডি মাদকসহ গ্রেপ্তার পাঁচ জনের প্রত্যেককে পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম শুনানি শেষে এ রিমান্ডের আদেশ দেন। রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- সিরাজুস সালেকীন তপু, এসএম মনওয়ার আকিব আনান, নাজমুস সাকিব, সাইফুল ইসলাম সাইফ এবং নাজমুল ইসলাম। এর আগে খিলগাঁও থানার এ মামলায় পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বদরুল আল আমিন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অনলাইন ও অফলাইনে যোগাযোগ করে সম্প্রতি আবিষ্কৃত এলএসডি মিশ্রিত প্রিন্টের ব্লট পেপার ও অবৈধ নেশাজাতীয় মিথাইল অ্যাম্ফাটামিনযুক্ত মাদকদ্রব্য কথিত আইস এবং গাঁজা মাদক বেচাকেনা করে আসছে। আসামিরা তাদের পলাতক অন্য অজ্ঞাতনামা মাদকব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় বিভিন্ন উপায়ে দেশের বাইরে থেকে অবৈধ মাদকদ্রব্য এলএসডি মিশ্রিত ব্লট পেপার, অবৈধ নেশাজাতীয় মিথাইল অ্যাম্ফাটামিনযুক্ত মাদকদ্রব্য কথিত আইস এবং গাঁজা সংগ্রহ করে বিক্রি করত। প্রাথমিক তদন্তে আসামিদের মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।

আসামিরা সংঘবদ্ধ মাদক বিক্রেতা ও সরবরাহকারী দলের সক্রিয় সদস্য। তারা অভিনব কৌশলে দেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদক সংগ্রহ করে কৌশলে ঢাকায় এনে শহরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছিল। তারা মাদক সরবরাহ করে দেশের যুবসমাজ, বিশেষ করে ছাত্রসমাজকে ধ্বংসের পথে ধাবিত করছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা মামলার ঘটনার দায় স্বীকার করলেও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর সুকৌশলে এড়িয়ে যায়। সময়স্বল্পতার কারণে তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেননি। তাই আসামিদের নাম-ঠিকানা যাচাই, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারসহ মাদকচক্রের মূলহোতাদের গ্রেপ্তারসহ আরও মাদক উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

আসামিদের পক্ষে আইনজীবী মো. আবুল হোসেন, কামরুল আহমেদ কামাল প্রমুখ আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তারা বলেন, তাদের গত ২৯ মে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আসামিরা ছাত্র, তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের রিমান্ড বাতিল করা হোক। এ অবস্থায় তাদের রিমান্ড নামঞ্জুরের প্রার্থনা করছি। প্রয়োজনে তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন এবং জামিন নামঞ্জুর করেন।

About Author