হাবিব রহমান : করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যস্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে নিজেদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের গতি বাড়িয়েছে জঙ্গিরা। নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য চলমান লকডাউনে অনলাইন প্ল্যাটফরমে বেশি সময় কাটানো ব্যক্তিদের মধ্য থেকে টার্গেট নির্ধারণ করা হচ্ছে।
এ প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জঙ্গিবাদ দমনে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান মহামারীর কারণে এক প্রকার বাধ্য হয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রম কিছুটা সীমিত করতে হয়েছে।
তবে জঙ্গিরা পরিস্থিতি যাতে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট, অ্যান্টি টেরজিম ইউনিট (এটিইউ) ও র্যাব।
এদিকে তবলিগের নামে সৌদি আরবে যাওয়ার উদ্দেশে এক মাস আগে ‘হিজরত’ করা জেএমবির ১৭ অনুসারীকে রাজধানীর কাকরাইল থেকে গতকাল মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করেছে সিটিটিসি। সংস্থাটি জানায়, গ্রেপ্তাররা এক মাস আগে তবলিগের নামে কথিত ‘হিজরত’ করে। তারা জঙ্গি তৎপরতার জন্য ঘর থেকে বেরিয়েছিল। সৌদি আরবে গিয়ে ‘ইমাম মাহাদির সৈনিক’ হিসেবে তাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তাদের বলা হয়েছিল, করোনার দুর্যোগে আকাশ থেকে গজব নেমে আসবে এবং সবকিছু ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে যাবে। তখন সীমান্তে কোনো পাহারা থাকবে না। এই সময় তারা যেন চলে আসে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন।
গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সিটিটিসির এডিসি তৌহিদুল ইসলাম জানান, কাকরাইল মসজিদের বিপরীত পাশে পাবলিক হেলথ কার্যালয়ের সামনে থেকে ওই ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১৯টি ফোন, ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ও ৯২২ ডলার জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে সৌদি আরবে যান এবং এখনো সেখানে অবস্থান করছেন। তিনি জিহাদের পক্ষে ইমাম মাহাদির সৈনিক হিসেবে বিভিন্ন বক্তব্য এবং ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ নামক স্থানে মুসলমানদের পক্ষে জিহাদ করার আহ্বান জানিয়ে অডিও-ভিডিও প্রকাশ করেন। গ্রেপ্তাররা তার বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করে। গত মার্চের মাঝামাঝি তারা পরস্পর যোগাযোগ করে হিজরতের সিদ্ধান্ত নেয়। তবলিগ জামাতের আড়ালে সাতক্ষীরা বা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তারা কাশ্মীর সীমান্ত হয়ে সৌদি আরব পৌঁছতে চেয়েছিল। ১৮ মার্চ তারা প্রথমে সাতক্ষীরা ও পরে যশোর সীমান্তের কাছে বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করে ভারতে যাওয়ার জন্য। তাদের জানানো হয়েছিল আগামী চল্লিশ দিন সূর্য উঠবে না, আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যাবে, কাফিররা সবাই মারা যাবে, ইমানদারদের শুধু হালকা কাশি হবে। ইমাম মাহাদির আগমন এই রমজানে সমাগত তাই তারা যেভাবে পারে সেভাবে যেন আসার চেষ্টা করে। তারা সাতক্ষীরা ও যশোর সীমান্ত দিয়ে পার হতে না পেরে ঢাকা হয়ে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী তারা ঢাকায় এসেছিল।
এডিসি তৌহিদুল ইসলাম আরও জানান, আরমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইতোমধ্যে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্র জানুয়ারিতে ওমরা পালনের উদ্দেশে সৌদি গিয়ে আর ফিরে আসেনি। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় সাদ, কাউসার, শরীফ, তোফাজ্জল, গিয়াসউদ্দিন, আলী আজম ও রাশেদ নামে আরও সাত জন সৌদি হিজরত করেছে বলে গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামান বলেন, জঙ্গিরা যে কোনো সুযোগকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। এখনো তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমাদেরও গোয়েন্দা নজরদারি এবং সাইবার মনিটরিং চলমান রয়েছে। আমারাও যে কোনো পরিস্থিতিতেই জঙ্গিদের ওপর থেকে নজর সরাই না। সুতরাং ভয়ের কোনো কারণ নেই।
এর আগে গত ২৩ মার্চ নাটোর থেকে কেফায়েত উল্লাহসহ আনসার আল ইসলামের ৭ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তারাও জিহাদের জন্য কাশ্মীরে যাওয়ার উদ্দেশে ঘর ছেড়ে ছিল।
এ বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যন্টি কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, যে কোনো চ্যালেঞ্জিং সময়েও র্যাব জঙ্গিদের ওপর গুরুত্ব দিয়ে নজর রাখে। এ কারণে করোনা প্রার্দুভাবের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নিয়মিত জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করে আসছে র্যাব।