সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় - Amader Bangladesh

দেশের পাঁচ অঞ্চলজুড়ে বয়ে চলা মৃদু শৈত্যপ্রবাহে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিশেষ করে পঞ্চগড়, নীলফামারী, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ জেলায় প্রচ- শীতে মানুষের দৈনন্দিন জীবনসহ সব কিছুতেই যেন জবুথবু অবস্থা। গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। সেখানে তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সীতাকু- ও কক্সবাজারে ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নওগাঁ, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া

মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আজ শনিবারও অব্যাহত থাকবে।

এদিকে এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন ভাসমান ছিন্নমূল মানুষ ও দিনমজুররা। পঞ্চগড়সহ কিছু এলাকায় জেলা প্রশাসন এবং বেসরকারি উদ্যোগে মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও চাহিদার তুলনায় তা ছিল অনেক কম। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

চুয়াডাঙ্গা : গতকাল সারাদিন জেলার অধিকাংশ স্থানে সূর্যের দেখা মেলেনি। সন্ধ্যা নামতেই ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে রাস্তাঘাট। হিমেল বাতাস তীব্র শীতের অনুভূতি বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুণ। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, গতকাল সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের সর্বনিম্ন। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৮ শতাংশ। এর আগের দিন সকাল ৬টায় জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। এ শৈত্যপ্রবাহ আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে।

চুয়াডাঙ্গায় শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদর হাসপাতালে ঠা-াজনিত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। প্রতিদিনই ৩০ থেকে ৪০ শিশু এবং বৃদ্ধ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন ছয় মাস বয়সী ৩০ থেকে ৩৫ শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতার্তদের মধ্যে কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম।

পঞ্চগড় : দেশের সর্ব-উত্তরের এই জেলায় জেঁকে বসেছে শীত। গতকাল সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে শীতার্ত মানুষের মধ্যে ৩১ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, চলতি মাসে আরও শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। বর্তমানে ঘণ্টায় ৪-৫ কিলোমিটার বেগে শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে।

সিরাজগঞ্জ : কয়েকদিন ধরে প্রায় সময় সূর্যের দেখা না মেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত চরাঞ্চলের বাসিন্দারা শীতে বেশি কষ্ট করছেন। তাড়াশে অবস্থিত আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, নদী অববাহিকাগুলোতে ঘন কুয়াশা পড়েছে। গতকাল জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী তিন দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।

জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৪৪ হাজার ১০০ এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আরও ১০ হাজার কম্বল আমরা পেয়েছি। এরই মধ্যে সাত পৌরসভা ও ৮৩টি ইউনিয়নে ৪৯০টি করে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ২০ হাজার কম্বল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কম্বলগুলো হাতে পেলে পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।

হিলি (দিনাজপুর) : তীব্র শীতে ব্যাপক কষ্টের মধ্যে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ। সন্ধ্যার পর আগুন জ¦ালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে। সড়কে যানবাহন চলাচল চলছে ধীরগতিতে। প্রতিটি ট্রেন ছাড়ছে বিলম্বে। হিলি রেলস্টেশনে বসবাস করা ছিন্নমূল রাহেলা বেগম বলেন, খুব ঠা-া আর ঘন কুয়াশার জন্য বাইরে বের হতে পারছি না। আমাদের গরম কাপড়ও নেই। এবার সরকারিভাবে কোনো শীতবস্ত্র পাইনি।

হিলি রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার তপন কুমার চক্রবর্তী জানান, কুয়াশার কারণে গতকাল বরেন্দ্র ট্রেন ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট বিলম্বে এসেছে। হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-এ-আলম জানান, এ পর্যন্ত যে পরিমাণ শীতবস্ত্র পাওয়া গেছে সেসব তিনটি ইউনিয়নের শীতার্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণের জন্য আরও ১৫০০ শীতবস্ত্র জেলা প্রশাসনের কাছে চাওয়া হয়েছে।

About Author