স্টাফ রিপোর্টারঃ নওগাঁর নিয়ামতপুরের বালাতৈর সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আমজান হোসেনের বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই কলেজের অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক মোঃ এরশাদ আলী। সে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা নওগাঁ সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও ইংরেজি বিষয়ের অধ্যাপক মোঃ জাকির হোসেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অর্থনীতি বিষয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর গভার্নিং বডির সিদ্ধান্তে গত ৬ মে ২০১৫ তারিখে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ডিগ্রি ৩য় পদের নিয়োগ দেন ৩১ জুলাই ২০১৫ তারিখে। আমি সেই পরীক্ষায় ১ম হয়ে নির্বাচিত হই। ৩য় পদের নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ গভর্নিং বড়ি কর্তৃক অনুমাদেন হয় ০৫/২০১৫ নং অধিবেশনে ২২ আগস্ট ২০১৫ তারিখে। কলেজের অধ্যক্ষ ড. মোঃ আমজাদ হোসেন গত ৩১ আগস্ট ২০১৫ তারিখে আমাকে ডিগ্রী ৩য় পদে নিযাগে পত্র প্রদান করেন। সে মোতাবেক আমি গত ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ যোগদান করি। অধ্যক্ষ তখনি আমাকে আমার নিয়োগের কাগজপত্রাদি প্রদান করেন যা এখনো আমার নিকট আছে। পরবর্তীতে তিনি গত ২০ফেব্রুয়ারী ২০১৬ তারিখে ডিগ্রী অর্থনীতি ২য় পদ শূন্য হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মাতোবেক ও গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত ক্রমে ০২/২০১৬ অধিবেশনের সিদ্ধান্তে গত ১৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে আমাকে ডিগ্রী ৩য় পদ থেকে ডিগ্রী ২য় পদে সর্ব সম্মতি ক্রমে সমন্বয় করা হয়। সে মোতাবেক অধ্যক্ষ মহোদয় আমাকে ২য় পদের সমন্বয়ের সঠিক রেজুলেশন প্রদান করেন এবং উক্ত পদে পদায়নের পরে তিনি পুনরায় ১৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে আমাকে ২য় পদের নিয়োগপত্র প্রদান করলে ২০ মার্চে আমি ২য় পদে যোগদান করি।
২০১৯ সালে ডিগ্রি স্তর এমপিও হলে অধ্যক্ষ সাহেব আমার এম.পি.ও ভুক্তির আবেদন অনলাইনে প্রেরণ করার সময় একটি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে অর্থের লােভে আমার নিয়োগ বোর্ডের আসল সকল কাগজপত্রাদি টেম্পারিং করে অধ্যক্ষ অতিরিক্ত পাঁচটি বিষয়ের (বাংলা, ইংরেজী, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ভুগোল) অবৈধ নিয়োগ দেখিয়েছেন। এই পাঁচটি বিষয় আমার শিক্ষক নিয়োগ নির্বাচনী বাের্ড জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মনোনয়ন চিঠিতে এবং নিয়োগ নির্বাচনী কমিটিতে ডিজি মহোদয়ের প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত থাকার বিষয়ে চিঠিতে উল্লেখ নাই। অতিরিক্ত এই পাচটি বিষয় আমার নিয়োগের মূল রেজুলেশনে ও কোন চিঠিতে এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সাথেও মিল নেই। যার জন্য আমার অজান্তে গোপনে তিনি কাগজপত্র আমাকে না দেখিয়ে এবং আমাকে সঙ্গে না নিয়ে একাই আমার নিযােেগর সঠিক ফাইল প্রেরন না করে তিনি।
আমার নিয়োগ সংক্রান্ত মূল কাগজপত্রাদি টেম্পারিং করে নিজের মত কাগজপত্র তৈরি করে আমার নিয়োগের মূল রেজুলেশন কাটাকাটি বা ঘষামাজা করে অতিরিক্ত পাঁচটি বিষয় বসিয়েছেন যা আমার নিয়োগের আসল কোন কাগজের সাথে মিল নাই। আবেদন করার মুহূর্তে আমার আসল সকল কাগজপত্রাদি টেম্পারিং করে আমার এম.পি.ও ভুক্তির জন্য ১ম আবেদন তিনি গোপনে গত ২ মে ২০২০ তারিখে প্রেরণ করেন। একই তারিখে আমার কলেজের ডিগ্রী শাখার সকল শিক্ষক ও কর্মচারীর আবেদন প্রেরণ করেন একারণে আমারসহ সকল শিক্ষকের ফাইল রিজেক্ট হয়। রিজেক্টের কারণ আমারসহ সকল শিক্ষকের একই ছিল। পরবর্তীতে গত ২৮ জুলাই ২০২০ তারিখে পুনরায় আমার আবেদনসহ সকল শিক্ষকের আবেদন প্রেরণ করেন এবং সকল শিক্ষকের বেতন হয়ে যায়। কিন্তু আমার ফাইল রিজেক্ট হয়ে যায়। যা আমাকে তিনি দেখান নাই। কিন্তু আমার নিয়োগের সঠিক কাগজপত্র প্রেরণ না করায় এবং আমার বেতন না হওযার কারণ জানতে চাই। আমি আমার ফাইল দেখতে চাই ও রিজেক্ট কপি চাই কিন্তু তিনি আমাকে দেন নাই। ওই সময় তিনি বলেন সামান্য ভুল আছে, আমি ঠিক করে নিব, সামনের ধাপে আমি তোমার বেতন করে দিব। তুমি কাউকে কিছু বলবা না, অন্য মানুষকে জানাজানি করানো। বলাবলি করলে তোমার বেতন করে দিব না। কলেজের কোন শিক্ষককে ও গভর্নিং বডিকে বলতে নিষেধ করেন, প্রতিদিন কলেজে যেতেও নিষেধ করেন এবং কলেজে আমি গেলে যেন কলেজ টাইমের পরে যাই সেটা বলেন। এম.পি.ও আবেদনের সময় হলে তিনি আবেদনের ওই কয়েক দিন কলেজে ঠিক মত আসেন না, আমার ফোন রিসিভ করেন না। বিভিন্ন তালবাহানা করতে থাকেন। আমি তিনার কথায় চুপচাপ ছিলাম কিন্তু তিনি বিভিন্ন অপকৌশলে শুধু সময় ক্ষেপন করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে আমি আমার বেতন না হওয়ার আসল কারণ অফিসের মাধ্যমে জানতে পারি এবং আমার বেতনের জন্য পাঠানো কাগজগুলি আমি সংগ্রহ করি। সেখানে দেখা যায় আমার নিয়োগের সঠিক কাগজপত্র গুলোর সাথে প্রেরণকৃত কাগজপত্রের কোন মিল নাই। তিনি আমার নিযাগে ৩য় পদ এবং পরে সমন্বযের ২য় পদ উল্লেখ করে আমার বেতনের কাগজ প্রেরণ করেননি। আমার নিকট আমার বৈধ নিয়োগের আসল রেজুলেশনসহ যাবতীয় মূল কাগজ পত্র রয়েছে। বর্তমানে অধ্যক্ষ মহোদয় আমার সাথে তেমন কোন যোগাযোগ করেন না, আমার কোন কথা শোনেন না। আমি যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাইনা। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন অপকৌশলে কালক্ষেপন করছেন। আমার বেতনের জন্য বর্তমানে তিনি কোন পদক্ষেপও নিচ্ছেন না। এখন তিনি আমাকে অফিসে যোগাযোগ করে বেতন করে নিতে বলছেন। অধ্যক্ষ নিজের অপরাধ লুকানোর জন্য আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন কিছু কথা বার্তা বলছেন। তিনি আরও বলেন, আমি তোমার বেতন করতে গেলেই আমার বড় সমস্যা হবে। তখন উপায় না পেয়ে আমি রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসকে আমার বিষয়টি জানাই। এক পর্যায়ে পরিচালক স্যার আমার বিষয়টি আমলে নিয়ে গত ২৭ অক্টোবর ২০২০ তারিখে কলেজে গিয়ে তদন্ত করে তিনি আমার নিযাগে সংক্রান্ত সকল কাগজপত্রাদি নিয়ে আসেন এবং অধ্যক্ষের টেম্পারিং করা কাগজপত্রও নিয়ে আসেন। তখন অধ্যক্ষ নিজের ভুল স্বীকার করে আইনি ব্যাখ্যাসহ গত ১২ আগস্ট ২০২১ তারিখে আমার সঠিক কাগজপত্রাদি অনলাইনে রাজশাহী আঞ্চলিক অফিসে প্রেরণ করেছেন তা তিনি আমাকে বলেন। কিন্তু আজও আমার বেতন হয়নি।
এব্যাপারে জাানতে বালাতৈর সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আমজান হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ইংরেজি বিষয়ের অধ্যাপক মোঃ জাকির হোসেন বলেন, তদন্তভার পাওয়ার পর আমি ওই প্রতিষ্ঠানে তদন্তে গিয়েছিলাম। তবে কলেজের অধ্যক্ষ সেদিন কলেজে উপস্থিত ছিলেন না। সকল তথ্য বিশ্লেষণ করে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে।